দি টাইমস, ৮ মার্চ, ১৯৭১
পল মার্টিন
অনুবাদ: ফাহমিদুল হক
আপস অথবা সরাসরি সংঘাত: পূর্ব পাকিস্তানে দ্বিধাগ্রস্ত
ঢাকা, মার্চ ৮। আজ পাকিস্তানের সংকট নতুন পর্বে প্রবেশ করেছে। কারণ দেশটির উভয় অংশকেই আজ রাজনৈতিক আপস অথবা সরাসরি সংঘাতের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বক্তৃতা দিয়েছেন, তা থেকে মনে হচ্ছে আপসের কিছু সুযোগ এখনও রয়েছে। তিনি বলেছেন ২৫ মার্চে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আইনসভায় বসতে রাজি হবার ক্ষেত্রে সামরিক সরকারকে অন্তঃত চারটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে। গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকা এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে যে-উত্তেজনা দেখা গিয়েছে, তা এখনও বলবৎ রয়েছে কিন্তু এরপরও শ্বাস ফেলার সময় তৈরী হয়েছে। বিপদের কথা এই, উভয় পক্ষের সামরিক ও বেসামরিক জঙ্গীরা বিশেষত পূর্বের মুজিববাদী চরমপন্থী ছাত্ররা সংকটকে পুনরায় চরম গভীরে ঠেলে দিতে পারে।
পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যত যে অনিশ্চিত তা বোঝা যাচ্ছে বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে যারা দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী তাদের ফিরে যাবার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রথম ব্যাচ হিসেবে জার্মানীদের একটি দল, যাদের মধ্যে দূতাবাসের স্টাফ ও পরিবার রয়েছে এবং কর্মরত অন্যরা আজ ব্যাংককে চলে গেছেন। ব্রিটিশদের মধ্যে দেশে ফিরে যাবেন তাদের জন্য একটি বোয়াক ভিসি টেন এয়ারলাইন অপো করছে আগামীকাল ঢাকা ছাড়ার জন্য। যদিও সবাইকে চলে যাবার ঘোষণা দেয়া হয় নি, তবুও কোনো সরকার সতর্ক হবার প্রয়োজন মনে করছে। বিগত সপ্তাহগুলোর ব্যাপক মিছিল-বিক্ষোভে থেকে অবশ্য বিদেশীদের বিরুদ্ধে কোনো হুমকি দেয়া হয় নি। কিন্তু যেহেতু আইন-কানুন পরিস্থিতি ভালো নয়, তাই এই মনোভাব যে পরিবর্তিত হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বাঙালিদের জন্য ইস্যুটি খুব পরিস্কার: শেখ মুজিবুর ও তার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যেতে দিতে হবে, যারা পরিস্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে নির্বাচনে জিতেছে, অথবা নির্বাচনটিই প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। শেখ পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র কার্যকর শক্তি বলে এতোকিছু সম্ভব হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে শেখের অবস্থান সাংঘাতিক ভালো। ৩ মার্চের সংসদীয় অধিবেশন স্থগিত করার পর আওয়ামী লীগের ডাকে ঢাকায় হরতাল পালিত হচ্ছে।
যদিও প্রদেশজুড়ে প্রয়োজনীয় সেবা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু সব সরকারী-বেসরকারী অফিস, স্কুল ও ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকবে। রাজস্ব প্রদান স্থগিত থাকবে, পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ থাকবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না-দেয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে চালু পশ্চিম পাকিস্তানের একাউন্ট বন্ধ থাকবে। শেখ পশ্চিমের সঙ্গে যে-অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছেন, এর ফলে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা তৈরি করবে। বাঙালিরা বিশ্বাস করে যেহেতু তাদের বেশিরভাগ উৎপাদিত পণ্য পশ্চিম থেকে আসে, তাই বাণিজ্য বন্ধ হলে তারা এর প্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
শেখ আরেক জায়গায় জয়ী হয়েছেন। তার অসহযোগ আন্দোলন কাজে দিচ্ছে। ব্যপারাটা বোঝা গেল, যখন গতকালের বিশাল জনসভায় তিনি যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন ঢাকার বেতারকেন্দ্র তা প্রচার করতে রাজি হলো। কিন্তু সময়মতো তা সম্প্রচারিত হয় নি। বিক্ষোভকারীরা এর প্রতিবাদ জানায় এবং বেতারকেন্দ্রে ঘরে-তৈরী-বোমা নিক্ষিপ্ত হয়।