Category Archives: বাংলা আর্কাইভ

পাকিস্তানের নির্বাচন মি. ভুট্টোকে পশ্চিমে নেতৃত্ব আনছে এবং পূর্বে শেখ মুজিবুরকে বিজয়ী করছে

দি টাইমস, ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭০

অনুবাদ: ফাহমিদুল হক

একটি বিস্ময়কর সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজয়ের মাধ্যমে পকিস্তানের প্রথম অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো পশ্চিমের একক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত হয়েছেন। পশ্চিমাংশে নতুন সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে যেখানে ধরা হয়েছিল মি. ভুট্টোর সোশ্যালিস্ট পিপলস পার্টি ৩০টি আসন পাবে, সেখানে তারা পশ্চিমের ১৩৮টি আসনের মধ্যে ৮১টি আসন লাভ করেছে। মি. ভুট্টো ১১৯টি আসনে তার প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন এবং তার দল আশা করছে সবগুলো আসনের ফলাফল প্রকাশ হলে আরো ২০টি আসন লাভ করে শীর্ষে অবস্থান করবে।

পূর্ব প্রদেশে জাতীয়তাবাদী দল আওয়ামী লীগ, যেমন আশা করা হয়েছিল, বাংলার জন্য নির্ধারিত ১৬২টি আসনের মধ্যে ইতোমধ্যেই ১৪৫ আসন লাভ করেছে। এভাবে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যদিও পশ্চিমের কোনো সমর্থনই তারা পাবে না। একইভাবে ভুট্টোর অনুসারীরা পশ্চিম পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ, পূর্বে সমর্থনের কোনো আশা বা চেষ্টা তারা করেনি।

এই দু’জন আঞ্চলিক নেতা পকিস্তানের সব ইস্যুতে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করে থাকেন এবং নির্বাচনের এই ফলাফল পকিস্তানকে সম্পূর্ণ দু’টি পৃথক রাজ্যে বিভক্ত করে ফেলবে বলে মনে হচ্ছে। মি. ভুট্টো ‘ইসলামী সমাজতন্ত্র’র ব্যানারে তার নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে এক হাজার বছরের যুদ্ধ করার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে বেশিরভাগ আসন পেয়েছেন। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশেও তিনি সমর্থন অর্জন করতে পেরেছেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চূড়ান্ত ফলাফল আসছে এবং এটা পরিস্কার যে ভুট্টো পাঞ্জাবের ৮২টি আসনের মধ্যে অন্তঃত ৬২টি আসন পাবেন এবং নিজ প্রদেশ সিন্ধুতে ২৭টি আসনের মধ্যে ১৯টি আসন পাবেন। এছাড়া তিনি নিজে যে-ছয়টি আসনে দাঁড়িয়েছিলেন তার পাঁচটিতেই তিনি জিতছেন। যে কাউন্সিল মুসলিম লীগকে ভাবা হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, মিয়া মুমতাজ দৌলতানার সেই দলটির ভরাডুবি হয়েছে। যে ৫০টি আসনে তারা প্রতিযোগিতা করেছিল তার মধ্যে তারা মাত্র ৭টি আসন পাচ্ছে। বিস্ময়করভাবে ডানপন্থী কট্টর দল জামাত-ই-ইসলামী খুবই খারাপ ফলাফল করেছে এবং বাম ধারার ধার্মিকের দল হাজারভি জামাত উলামা ইতোমধ্যেই পাঁচটি আসন লাভ করেছে।

নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্যান্য ২৩টি দলের প্রার্থীরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। কিছু বিখ্যাত নেতা তাদের নিজস্ব নেতৃইমেজের কারণে নিজ নিজ এলাকায় জয়লাভ করেছেন। এদের মধ্যে আছেন পাকিস্তান গণতন্ত্রী দলের বিখ্যাত নেতা নূরুল আমিন, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মিয়া মুমতাজ দৌলতানা ও আব্দুল ওয়ালি খান। তবে বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আসগর খান, যিনি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পিপলস পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাওয়ালাপিন্ডিতে পরাজিত হন।

এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে ক্ষমতাবান আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। দলটির জনপ্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে প্রধানত তার পশ্চিম পাকিস্তান বিরোধী অবস্থান এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসনের প্রতিজ্ঞা থেকে। তবে এখানে একটি ব্যাপার ছিল যে, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিকিংপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এভাবে শেখ মুজিবের মাঠ ফাঁকা হয়ে যায়। দলটি এখন গত সপ্তাহে বাতিল হয়ে যাওয়া ঘুর্ণিঝড়-দূর্গত বাকি নয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।

রাওয়ালাপিন্ডি, করাচি, পেশওয়ার ও পাঞ্জাবের গ্রামাঞ্চলে কিছু বিচ্ছিন্ন সংঘাতের ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন এক অর্থে পাকিস্তানে উত্তেজনা কমিয়ে দিয়েছে কিন্তু অন্য অর্থে দেশটিতে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

পাকিস্তানের নতুন রাজনৈতিক প্রতিনিধিবর্গকে জাতীয় পরিষদে প্রথম দিন বসার পর থেকে ১২০ দিন সময় দেয়া হবে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার জন্য। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল ও সাংবিধানিক সংসদের চেহারা যা দাঁড়াচ্ছে তা থেকে মনে হচ্ছে সে-প্রক্রিয়া থেমে যাবে। পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ জন প্রতিনিধি এরকম একটি সংবিধানের জন্য লড়াই করবেন যা প্রদেশগুলোর সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন দেবে। শেখ মুজিব যদি সংসদে তার দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে তার প্রতিরা ও পররাষ্ট্র ছাড়া সব ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।

তিনি এরকম একটি সংবিধান চাচ্ছেন যা বাঙালিদের তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য নিজস্ব পছন্দকে যাচাই করার সুযোগ নিশ্চিত করবে। এর ফলে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে। অন্যদিকে ভুট্টো ক্ষমতাধর কেন্দ্রীয় সরকার সমর্থন করেন এবং তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ দাবিরই বিরোধিতা করবেন। তাই দুই নেতা সমঝোতায় আসতে পারবেন কিনা সেব্যাপারে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।

তারা ইদানীং দাড়িওয়ালাদের দেখে নিচ্ছে

দি অবজারভার, ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭০

গ্যাভিন ইয়াং

অনুবাদ: ফাহমিদুল হক

করাচি, ৫ ডিসেম্বর:

রাস্তা-ঘাটে লাউডস্পিকার-ভ্যান থেকে দীর্ঘ বক্তৃতা শুনতে পাবেন, সংবাদপত্রে রাজনৈতিক অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ আপনাকে সন্ত্রস্ত করে তুলবে। সেনাবাহিনী রয়েছে সহিংসতা রোধ করার জন্য। সোমবার ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে স্মরণীয় একটি দিন; ২৩ বছরের মধ্যে প্রথম ৫৬ মিলিয়ন ভোটারে জন্য সাধারণ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এ-নির্বাচনই নির্ধারণ করবে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় থাকবে কি থাকবে না। এটা সম্ভবত তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান পৃথক হয়ে যাবে কি না, যদিও এটা নির্ভর করছে বাংলার অনলবর্ষী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর; তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের দ্বারা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান হবার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

পাকিস্তানের বামেরা লড়াইয়ের পথে আছে। লাহোরের ওল্ড গার্ডেন সিটির একটি প্রাসাদোপম বাড়ির একটি লম্বা ডাইনিং টেবিলে একজন পাঞ্জাবী মিলিওনিয়ার ও একজন উদীয়মান আইনজীবীর (যিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর পক্ষে শহরে সাধারণ নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন) সঙ্গে বসে ছিলাম। মিলিওনারটি এতো ধনী যে তাকে কাজ করতে হয় না, যদিও তারা দু’জনেই কেমব্রিজে ছিলেন। তারা ক্লান্ত হাতে খাবার তুলে নিলেন; এইমাত্র তারা তাদের পেছনে একের পর এক দাঁড়িয়ে থাকা চাকরদের কাছে বামপন্থী লিফলেট বিতরণ করেছেন। খাবার মুখে নিয়ে তমিজের সঙ্গে চিবুতে থাকা তরুণ মিলিওনিয়ারটি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একজন নেতা, যে-দলটি ভুট্টোর বামপন্থী দলের চাইতে বেশি বামপন্থী। ভুট্টোর সঙ্গে দলটির পার্থক্য কী? ক্লান্ত চোখের ওপর ক্লান্ত চোখের পাতা ফেলে তিনি বলেন, ‘কিছু অদ্ভূত কারণে ভুট্টো সুকর্নর ভক্ত। আমরা অবশ্য মাও সে তুং-এর অনুসারী।’

তিনি শান্তভাবে একটি লম্বা হোল্ডারে সিগারেট নেভালেন। ‘ভুট্টো মুসলমানদের নিয়ে খেলছেন বলে মনে হচ্ছে।’ তিনি আইনজীবীর দিকে তাকিয়ে বলরেন, ‘শ্রমিকরা এখন কাঁচা-পাকা দাড়িওয়ালা মৌলভীদের দেখে নিচ্ছে, আপনি হয়তো লক্ষ করেননি।’ আইনজীবী উত্তর দিলেন যে, পাকিস্তান এখনও খুবই সনাতনপন্থী ধর্মীয় দেশ — একই ধর্ম পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তনের মধ্যকার সংযোগ সেতু — ইসলাম ও সমাজতন্ত্র ব্যবহার একটি যৌক্তিক কৌশল। মূলস্রোতের বাইরে এ-ধরনের পরিস্থিতিতে বামপন্থীদের ভোটাররা অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে; পরবর্তী কয়েকটি সপ্তাহে তারা শুধু এটাই জানবে যে তারা কী পেয়েছে।

বাম হলো অদ্ভূত এক জিনিস, অপ্রচলিতভাবে নানারঙা ও বহুধাবিভক্ত, এটা মাওবাদ থেকে সুকর্ণবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং শেষে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রে ফিরে আসে। এর নেতাদের বেশিরভাগই সচ্ছল। কেউই শ্রমজীবী শ্রেণীর নয়। ডান ও কেন্দ্রের ইসলামপন্থী-দল-বিরোধী বামপন্থী-তারকারা শেষ সময়ে সক্রিয় — মুজিব পূর্বে বিজয়ের অপেক্ষা করছেন, ভুট্টো পশ্চিমে সনাতনপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এদিকে মুজিবের মিটিংয়ে লাখ লাখ মানুষ জয়ের জন্য একত্রিত হচ্ছে; ভুট্টো একই সঙ্গে পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, নির্বাচনী আইন তাকে সে সুযোগ দেয়।

মুজিবের সমস্যা কীভাবে জয়ী হতে হবে, তা নয়, জয়ের পর তিনি কী করবেন সেটাই হলো সমস্যা। তার আন্দোলন তাকে ছয় দফা অনুসারে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বাস্তবায়নের কথা বলে। ছয় দফা অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে প্রতিরা ও পররাষ্ট্র থাকবে কিন্তু রাজস্ব গ্রহণের মতা কেন্দ্র হারাবে। এটা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মতো মিলিটারি-ব্যক্তিত্ব, যিনি জাঁদরেল কিন্তু বেকুব নন, মেনে নেবেন না। রাজনৈতিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানীরা অবিশ্বাস করলেও ভারতের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে তাদের অনুমোদন করে; তারাও কাউকে তাদের বাজেট নিয়ে পরীক্ষঅ-নিরীক্ষা করতে দেবে না। নব-নির্বাচিত আইনপরিষদ যখন নতুন একটি সংবিধান প্রবর্তন করতে যাবে তখন মুজিব ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত বাধার সম্ভাবনা রয়েছে। সংবিধানটি অনুমোদন না করা পর্যন্ত সেনাবাহিনী মতা পরিত্যাগ করবে না।

পূর্বের এই উদীয়মান তারকা একজন অপ্রতিরোধ্য, তীব্রভাষী, অন্তপ্রাণ রাজনীতিবিদ — যার ভরাট কণ্ঠ এবং তীব্রভেদী চোখ রয়েছে। ঢাকার তুলনামূলকভাবে সাদামাটা একটি বাড়িতে রমজান মাসে দেখা করতে গেলে তাকে পাইপে তামাক খেতে দেখা যায় এবং খুব গুরুত্ব দিয়ে সব বিষয়ে আলাপ করতে দেখা যায়। তিনি ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, শিপিং-এর জাতীয়করণের কথা বলেন এবং জানান এতোদিন ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের ‘উপনিবেশ’ পূর্ব পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম বাংলার সঙ্গে বাণিজ্য-সম্পর্ক স্থাপন করবে। কেউ জানে না কী ধরনের প্রধানমন্ত্রীত্ব তিনি তৈরী করবেন। তার নানা ধরনের সহকর্মী রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে তার চাইতে বামপন্থা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন, এবং তাদের দক্ষতাও অনিশ্চিত।

ভুট্টো হলেন একমাত্র ভোটপ্রার্থী যার সত্যিকারের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তিনি সৌজন্যপ্রিয়, বর্ণিল এবং তার মধ্যে অভিজাত্য রয়েছে। তার অনুসারীরা হাস্যোজ্জ্বলভাবে দলীয় ক্যাপ ও পতাকা নিয়ে মিছিল করে। যদিও তার মতা সিন্ধু প্রদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কিন্তু তিনি তার সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি অনেক কিছু করতে পারেন। তিনি ইতোমধ্যে পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে অনুসারী তৈরি করতে পেরেছেন। তিনি একজন রহস্যাবৃত ব্যক্তি। তিনি চাষীদের মধ্যে ভূমি বণ্টন করতে চান — এবং ভূস্বামীদের সনাতন প্রাধান্য খর্ব করতে চান। আজ পাকিস্তানে সম্পদ ও সমাজতন্ত্র পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় অথবা নিজেদের দ্বিধাগ্রস্তভাবে ঐক্যবদ্ধ করে।

আধুনিক ও অসমাপ্ত রাজধানী ইসলামাবাদে আমি ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেণ্ট আইয়ুব খানের সঙ্গে দেখা করি। তিনি তার বাসার লনে রোদে বসে চা খাচ্ছিলেন। তিনি এখন অতীত, ব্যর্থতা, একাকীত্ব ও পরিত্যাজ্যতার প্রতীক। সাবেক বন্ধু ও শুভার্থীরা তাকে পরিত্যাগ করেছে যাদের মধ্যে একজন হলেন ভুট্টো। ভুট্টো এবং পশ্চিম পাকিস্তানী অন্য যেকোনো বামপন্থীর জন্য এবার সত্যিকারের ক্ষমতালাভের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পাশ্চাত্য-বিরোধী মনোভাব এবং পিকিং-য়ের প্রতি সহানুভূতি পাকিস্তানকে বামপন্থীদের জন্য একটি উর্বর ভূমিতে পরিণত করেছে। এরকম একটা বিপদের সম্ভাবনা আছে যে, নির্বাচন-পরবর্তী মতাহীনতা বামপন্থী নেতাদের সবকিছু থেকে অনেক দূরে ঠেলে দেবে। যদি ইয়াহিয়া খানের শক্তিশালী ব্রিগেড আবার মতা দখল করে তবে মুজিব, ভুট্টো এবং অন্যান্য হতাশ নেতৃবৃন্দ বহুলপ্রতিক্ষীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা না পেয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ বা গৃহযুদ্ধ কিংবা উভয়কেই বেছে নেবে।

ঘূর্ণিঝড়-দুর্গতদের এক বছরের সাহায্য প্রয়োজন

দি টাইমস, ২৯ নভেম্বর, ১৯৭০

ম্যক্সওয়েল ব্রেম

অনুবাদ: ফাহমিদুল হক

পাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড়ে কি ২০০,০০০ লোক মারা গিয়েছে — যেমন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেছেন? অথবা ১০ লাখ — ঘটনাস্থলে উপস্থিতরা যেমন বলছেন? অথবা ২০ লাখ? এসব হল অনুমানের খেলা, যা কোনো কাজে আসে না। বর্তমানে সত্যিকারের প্রশ্ন হলো ত্রাণ বিতরণ এবং বন্যা-উপদ্রুত ব-দ্বীপকে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে যাবার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিশ্রম করা যাবে কি না এবং দু’সপ্তাহ আগের দুর্যোগে যারা বেঁচে গিয়েছে তাদের রক্ষা করা যাবে কি না। বেঁচে যাওয়াদের সংখ্যা হবে দুই মিলিয়ন — সংখ্যাটি নির্ভর করছে মৃত্যুর পরিমাণের ওপর। তাদের চোখে এখন অসহায়ত্বের চিহ্ন।

গতকাল বিকেলে আমি হেলিকপ্টার যোগে গত ১২ নভেম্বরের জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত একটি বৃহত্তম দ্বীপ হাতিয়ায় গিয়েছিলাম। বিরাণ সেই ভূখণ্ডে এখনও গবাদিপশু ও মানুষের মৃতদেহের স্তূপ। এখানে সেখানে জীবিতদের দল গাছের নিচে ভিড় করে আছে। তাদের কেউ কেউ ধাবমান জলের দেয়ালের হাত থেকে বাঁচার জন্য গাছে উঠেছিলো। এর ফলে জীবিতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের চাইতে শক্ত-সমর্থ পুরুষদের সংখ্যা বেশি।

আমার হেলিকপ্টারটি ছিলো ফরাসী। ওইতে নামের হেলিকপ্টারটি সৌদি আরব থেকে এসেছে। এটি হলো ব্রিটেনসহ আট জাতির সমন্বিত সাহায্যকারী এয়ার-লিফটের একটি, জীবিতদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য যাদের প্রাথমিক পর্যায়ের ত্রাণকার্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় প্লেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় খাবার, কাপড়, পানি পরিশোধক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে আসছে। পাকিস্তানের সৈন্যরা পাহারা দিয়ে চুরির হাত থেকে সেগুলোকে রা করছে। এয়ারপোর্ট থেকে সেগুলোকে সাধারণত হেলিকপ্টারযোগে সামনের সরবরাহ-ডিপোতে নেয়া হচ্ছে এবং এরপর উপকূল ও বন্যায় ভেসে যাওয়া দ্বীপগুলোতে সেগুলোকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ব্রিটিশ কমান্ডো হেলিকপ্টারগুলো পটুয়াখালী সাপ্লাই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪,৫০০ টন চাল, তেল, ময়দা, বিস্কুট, চিনি, আলু, গুঁড়ো দুধ এবং কাপড়চোপড় নিয়ে উপদ্রুত অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে। রেডক্রস ও অন্যান্য সংস্থার লোকজনকে সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে। কারণ, দুর্গতদের কাছে রিলিফ একটু দেরিতে হলেও ঠিকঠাকমতো পৌঁছে যাচ্ছে। রিলিফ বিতরণে এখন আর কোনো দেরি হচ্ছে না এবং রিলিফ সরবরাহেও কোনো ঘাটতি নেই।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার সরকারের ‘ভুল ও বিলম্ব’-এর কথা স্বীকার করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সাড়াকে অভূতপূর্ব বর্ণনা করেছেন। তিনি অবশ্য বিদেশী সাহায্যের কতদিন পর্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে সে-ব্যাপারে নিরব রয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে অন্তঃত এক বছরের জন্য সাহায্য প্রয়োজন হবে, কারণ সর্বগ্রাসী সমুদ্র ব-দ্বীপের কৃষিজ-ভূমিকে ধ্বংস করে ফেলেছে। পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের কাছে ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ডের জরুরি উন্নয়ন প্রস্তাবনা পেশ করেছে। একটি কানাডীয় সংস্থা দ্রুত-জরিপের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারকে ঘূর্ণিঝড়-উপদ্রুত এলাকাকে “স্বাভাবিক” করে তোলার জন্য দু’বছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার পরামর্শ দিয়েছে। এটা নিশ্চিত যে আরো বেশি কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে। একটি ব্যাপার হল, ৩০ মাইলব্যাপী উপদ্রুত-এলাকায় কোনো বাড়িঘরই দাঁড়িয়ে নেই। দ্বিতীয়ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত জমিজমা পূর্বের উৎপাদন-ক্ষমতায় ফিরে যেতে তিন বছর সময় নেবে। ব্যাপক সেচকার্যের প্রয়োজন রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে হবে। এবং কৃষিজ ভূমিকে সমুদ্রের হাত থেকে রা করার জন্য নতুন বাঁধ নির্মাণের বিরাট দায়িত্ব সামনে রয়েছে। মাটি দিয়ে তৈরি ১৬ ফুট উঁচু পুরনো বাঁধ ভেসে গেছে। ডাচ-সরকার দ্রুত ও সহজে বাঁধ নির্মাণের পদ্ধতি বের করার জন্য একটি টিম পাঠাচ্ছে।

এই ধ্বংসযজ্ঞ একটি বড়ো রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এটা অস্বীকার করা জরুরি হয়ে পড়েছে যে, পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত ও ভারত দ্বারা বিভক্ত কেন্দ্রীয় সরকার পূর্বের ধ্বংসলীলা মোকাবেলায় উদাসীনতা ও অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানীরা বলছে যে, বহির্বিশ্ব থেকে খাদ্য, হেলিকপ্টার ও অর্থ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসার আগেই এসেছে, এবং ৪.৪ মিলিয়ন পাউন্ড ত্রাণের জন্য বরাদ্দ ঘোষণা করতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ১০ দিন সময় লেগেছে। এছাড়া, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে যে, মৃতদের সৎকারের জন্য পাকিস্তানী সৈন্যদের পরিবর্তে ব্রিটিশ নাবিকদের ব্যবহার করা হয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ, যে-অংশ পাকিস্তানের ১১০ মিলিয়ন জনগণের মধ্যে পশ্চিমের তুলনায় দরিদ্রতম, এধরনের অভিযোগ এনে পশ্চিম পাকিস্তানের দলগুলোকে বিব্রত করার প্রচারাভিযানে নেমেছে। একটি সাংবিধানিক আইনপরিষদের জন্য পাকিস্তানে এখন থেকে আট দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। সর্ব-পাকিস্তানী আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্ব পাকিস্তানের শতকরা আশি ভাগ ভোট পাবার কথা।

তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে ঘূর্ণিঝড়-দুর্গতদের অবহেলা ও বঞ্চনার জন্য অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শেখ একজন জাতীয়তাবাদী যিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের জন্য স্বায়ত্তশাসন চান। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ব্যর্থতা শেখকে অনেকখানি সাহায্য করতে এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করতে বাধ্য।

গতকাল প্রথমবারের মতো ঢাকায় এরকম পোস্টার দেখা গেছে যাতে বলা রয়েছে, ‘সব নির্বাচিত সদস্যকে অবশ্যই রাওয়ালাপিন্ডি (পশ্চিমের রাজধানী) থেকে নয়, ঢাকা থেকে শাসনকার্যের দাবি করতে হবে’। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া মনে হয় এই বিরোধিতার মোকাবেলায় নামবেন। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যদি নবনির্বাচিত আইনপরিষদ এমন একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে যা তার ঠিক করে দেয়া মূলনীতর সঙ্গে না মেলে, তবে সামরিক শাসন চলতে থাকবে। মূলনীতিগুলোর একটি হলো পূর্ব পাকিস্তানের শুধু সীমিত স্বায়ত্তশাসন থাকা উচিত।

অনুবাদকের নোট: এই রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে এতবড়ো একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় পশ্চিম পাকিস্তানী সরকার কতখানি অবহেলা প্রদর্শন করেছে, যেহেতু দুর্যোগটি পূর্ব পাকিস্তানে।

অনুবাদকের বাছাই: “পূর্ব পাকিস্তানীরা বলছে যে, বহির্বিশ্ব থেকে খাদ্য, হেলিকপ্টার ও অর্থ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসার আগেই এসেছে, এবং ৪.৪ মিলিয়ন পাউন্ড ত্রাণের জন্য বরাদ্দ ঘোষণা করতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ১০ দিন সময় লেগেছে। এছাড়া, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে যে, মৃতদের সৎকারের জন্য পাকিস্তানী সৈন্যদের পরিবর্তে ব্রিটিশ নাবিকদের ব্যবহার করা হয়েছে।”

সমস্যাটা কোথায়?

দি ইকোনমিস্ট, ২৮ নভেম্বর, ১৯৭০

অনুবাদ: ফাহমিদুল হক

১২ ও ১৩ নভেম্বরের সাইক্লোন পাকিস্তানের আবহাওয়াবিদদের অসতর্ক রাখেনি। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ২৫০ মাইল বেগে আঘাত হানার আগের দিন কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকার পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও রাডার স্টেশনগুলো তাদের কাজ করে যাচ্ছিল। আমাদের পাকিস্তান-প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে আবহাওয়াবিদরা ১৬ ঘণ্টা পূর্বে ‘হারিকেন ডেঞ্জার’ সতর্কবার্তা এবং তার আট ঘণ্টা পরে ‘হারিকেন গ্রেট ডেঞ্জার’ সতর্কবার্তা ইস্যু করেছিলো। কেউ সেটা শোনেনি কেন? আংশিকভাবে এটা হল সেই বালকের গল্প যে নেকড়ে এসেছে বলে চিৎকার করতো। তিন সপ্তাহ আগে ২৩ অক্টোবরে একই অঞ্চলে কম ক্ষমতাম্পন্ন আরেকটা সাইক্লোন আঘাত করেছিলো। সেসময় রেডিও সম্প্রচার বন্ধ রেখে বারবার সাইক্লোনের পূর্বাভাস জানানো হয়েছিলো এবং উপকূলবর্তী লোকজনকে উঁচু স্থানের সরে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। সেবার সাইক্লোন সীমিত কিছু অঞ্চলে আঘাত হেনেছিলো এবং মাত্র ৩০০ জন মারা গিয়েছিলো। মৃতের হার পূর্ববর্তী বিপর্যয়ের তুলনায় কমই ছিলো। কিন্তু ১২ নভেম্বরে সতর্কবার্তা প্রচার করা সত্ত্বেও গতবার যারা বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিলো তারা আবার বাড়ি ছেড়ে যেতে চায়নি।

কিন্তু অফিসিয়াল অসতর্ককতা ও অবহেলাও ছিলো। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ২৫০ মাইল বেগে ঘুর্ণিঝড় ধেয়ে আসার চিত্র পাবার পরে দু’ভাবে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিলো: সমুদ্রজাহাজের জন্য চালনা সমুদ্রবন্দরে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সর্বোচ্চ ৯ নম্বর মহাবিপদসংকেত এবং জনগণের জন্য একটি বর্ণনা পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু উপকূল থেকে দূরবর্তী দ্বীপসমূহের কাছে সাইক্লোন চলে আসার পর বিপদসংকেত প্রত্যাহার করে নেয়া হয় এই ভেবে যে, জাহাজসমূহ ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে গেছে। সতর্কবার্তা সাধারণ আবহাওয়া-প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছিল এবং অনুষ্ঠানসমূহ যথারীতি প্রচার হচ্ছিল। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের অনেকেই বিষয়টিকে ততটা ভয়াবহ ভাবেনি।

সাইক্লোনের এমন গতি আগে দেখ যায়নি; দিক পরিবর্তন করে এবং শক্তি সঞ্চয় করে এটি পূর্ববঙ্গের উপকূলে ২৪ ঘণ্টা আগে আঘাত হানে। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত আঘাতের পরেও সাইক্লোনের সঙ্গে ধেয়ে আসা জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা এবং গভীরতা পরিমাপের ব্যর্থতার কোনো ব্যাখ্যা আবহাওয়াবিদরা দেননি। চট্টগ্রামের ভূ-কম্পন-পরিমাপ স্টেশন জলোচ্ছ্বাসের উপরিভাগের রেকর্ড পরিমাপ করতে সমর্থ হয়েছিলো।

পাকিস্তানের একটি হিসেব মতে, যদি জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেয়া হতো তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তঃত অর্ধেক কম হতো। জলোচ্ছ্বাসের আঘাতের বারো ঘণ্টা পরে যখন অনেক লোক ইতোমধ্যে মারা গিয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের আবহাওয়া-বিশারদরা প্লাবিত দ্বীপ হাতিয়া থেকে দুর্যোগের ওয়ারলেস-বর্ণনা বন্ধ করে দেন ‘ফেব্রিকেশন’ হিসেবে। তারা ভুল ধারণা নিয়ে ছিরলন যে, স্বল্প উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস রাত্রি শেষে দেখা যাবে। কিন্তু সত্য হলো পূর্ণিমার কারণে বঙ্গোপসাগরে উঁচু ঢেউয়ের জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো।

এখন সবাই অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে — আবহাওয়াবিদরা প্রাদেশিক সরকারকে, সরকার স্থানীয় এজেন্সিকে এবং স্থানীয় এজেন্সি আবহাওয়া অফিসকে। দায়িত্বে অবহেলা করা সেসব লোকদের কেউ কেউ তাদের দোষ এভাবে ঢাকছিলো যে, সাইক্লোন আঘাত করার আগের ঘণ্টায় তারা অনুপস্থিত থাকার কারণ, সারাদিন রোজা রেখে তারা ইফতারি করতে গিয়েছিলো। সাইক্লোন আঘাতের ২৪ ঘণ্টা পরেই কেবল দুর্যোগের প্রকৃত মাত্রা বোঝা গিয়েছিলো। শনিবার সকালে ঢাকার একটি পত্রিকা লিখল ‘শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়’। ১৪ তারিখেই মৃতের সংখ্যা অনুমানভিত্তিতে বলা হয়েছে ২০০,০০০। কিন্তু মৃতের সংখ্যা সঠিকভাবে ও যাচাই করে ঘোষণা দিতে অনেক সময় লেগেছে। ১৩ তারিখে সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা বলা হযেছে ৫০ হাজার। তখন থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেব দ্রুত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫,০০০-এ। সরকারি হিসেবে ক্রমে সত্যের ছোঁয়া লাগায় পশ্চিম পাকিস্তান এবং সারা বিশ্ব ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো কী ধরনের ধ্বংসলীলা চলেছে।

ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক সাহয্য ছিলো মাত্র ৩০,০০০ পাউণ্ড। এই পরিমাণ পরে বেড়ে দাঁড়ায় এক মিলিয়ন পাউণ্ডে। একটি প্রকাশিত আবেদনপত্রে আরো এক মিলিয়ন পাউণ্ডের আশা করা হয়েছে যা ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ত্রাণ-উদ্যোগ। লীগ অফ রেডক্রস সোসাইটি এবং জাতিসংঘের কাছে সাহায্যের জন্য পাকিস্তানের আবেদনের পর ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছে — বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের কাছ থেকে। প্রথম সমস্যা ছিলো পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত সাহায্য পাঠানো। সাহায্যের পরিমাণ ভালোই ছিলো; এবং তার বিরাট অংশ ইতোমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু আংশিকভাবে সেখানে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায় — ঢাকা এয়ারপোর্টে অবতরণ করতে দেরি হবার কারণে। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ প্রথমে বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো বাতিল করতে রাজি হয়নি।

জীবিত সব দুর্গতদের জন্য এখন যথেষ্ট পরিমাণ খাবার, কাপড় ও পরিচর্যার সংস্থান ঢাকায় প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু তার খুব সামান্যই গত সপ্তাহের শেষে রেডক্রসের মাধ্যমে দুর্গতদের পৌঁছেছে। ত্রাণসামগ্রী বহনকারী সব প্লেন দ্রুত এয়ারপোর্টে নামতে সরকারকে রাজি করাতে বেশ সময় লেগে যায়। উপদ্রুত ব-দ্বীপে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ একটি বিরাট মাথাব্যথার বিষয়। ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া হাতেগোনা কয়েকটি রাস্তায় এখন নরম পলি জমে আছে এবং জলপথে চলাচলকারী প্রায় সব নৌকাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন খুব প্রয়োজন হেলিকপ্টারের এবং ইঞ্জিল-চালিত নৌকার। কিন্তু পাকিস্তান আর্মি বা এয়ারফোর্সের কাছে তা যথেষ্ট আছে বলে মনে হচ্ছে না।

একটি সামরিক সরকারের জন্য এ-ধরনের মহাদুর্যোগে কিছু সুবিধা থাকার কথা। তাদের প্রশিতি যথেষ্ট লোক থাকার কথা এবং তাদের দ্রুতগতির যানবাহন থাকার কথা। কিন্তু সারা সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানের পাঁচটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন শুধু আংশিকভাবে সক্রিয় হয়েছে। যখন নভেম্বরের ১৬ তারিখে সামরিক বাহিনী ত্রাণকার্যের আদেশ পেল, ৫,০০০ লোক জীবিতদের কলেরা এবং টাইফয়েডের প্রতিষেধক দেয়া, মৃতদের কবর দেয়া এবং রাস্তাঘাট পুননির্মাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখলো। কিন্তু পাকিস্তান-সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসন এবং রেডক্রসের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল। কিছু ব্রিটিশ উদ্ধার-বিমান ঢাকায় কিছু অলস সময় কাটালো, রেডক্রস না সেনাবাহিনী তাদের পরিচালনা করবে এ-বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হবার কারণে। এ-সপ্তাহের মঙ্গলবার আর্মিকে একটা বড় মতা দেয়া হলো, রিলিফ কমিশনার হিসেবে একজন বেসামরিক লোককে সরিয়ে একজন সেনাবাহিনীর লোককে সেখানে বসানো হয়েছে। এবার কিছু কাজ হওয়া উচিত।

অনেক লোককে অবাক করেছে যে বিষয়টি, সেটা হল, পাকিস্তান এয়ার-ফোর্সের ২৫টি হেলিকপ্টার থাকা সত্ত্বেও শুধু একটিকে দুর্গতদের ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেবার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এটা ঠিক যে হেলিকপ্টারগুলোর বেশিরভাগই বেশি ওজন নিতে পারে না। কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করলে খুবই কাজে দিত। পূর্ব পাকিস্তানের রিলিফ কমিশনার জানিয়েছেন, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে হেলিকপ্টার আনতে গেলে ভারত তাদের দেশের ওপর দিয়ে উড়ে আসতে সেগুলোকে অনুমতি দিত না। পাকিস্তান-বিমানবাহিনীর বেশিরভাগ স্টেশন পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত। ভারত বলেছে তাদের অনুমতির জন্য কখনোই জিজ্ঞেস করা হয়নি। মূল ব্যাপার হল, যেহেতু পাকিস্তানের হেলিকপ্টারগুলো সামরিক হেলিকপ্টার এবং সেগুলো আসার পথে ভারতে অবতরণ করতে হতো, তাই পাকিস্তান কর্তৃপ সেগুলোকে ত্রাণের কাজে ব্যবহার করতে দিতে চায়নি। এখন ব্রিটিশ হেলিকপ্টার এবং এসল্ট-নৌকাগুলো বঙ্গোপসাগরের জাহাজ থেকে পরিচালিত হচ্ছে, এবং আমেরিকান হেলিকপ্টারগুলো আসতে শুরু করেছে। এবারে হয়তো রিলিফ বিতরণের কাজটি ঠিকঠাকমতো এগুবে। আশার কথা এই যে, বেঁচে যাওয়া হতভাগ্যদের অনেকেই তাদের কাছে রিলিফ পৌঁছার আগে ক্ষুধা, রোগ ও ঠাণ্ডায় মারা যায়নি।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বুধবার দু’দিনের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন ব-দ্বীপ অঞ্চলে হেলিকপ্টার-ট্যুর দেবার উদ্দেশ্যে, দু’সপ্তাহ পরের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। রাওলাপিন্ডির সরকার এটাকেই ভেবেছেন পূর্ববঙ্গের জন্য যথেষ্ট করা হচ্ছে। সাইকোনের পূর্বে অধিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচনী ইস্যু। এখন পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে ত্রাণ-বিতরণে এবং ‘মানবেতিহাসে বৃহত্তম প্রাকৃতিক-দুর্যোগ মোকাবেলায়’ ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। এগারোটি দল নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সম্ভাব্য বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সময় নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। কিন্তু পিকিংপন্থী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি তাদের প্রার্থীদের নাম প্রত্যাহারের জন্য বলেছে। নির্বাচন-স্থগিত-হবার-ঘোষণা কিছু দলের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। কারণ, তদের অনেকে খেলাপি হবার জোর সম্ভাবনা আছে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে কেউই খুব পরিষ্কারভাবে কিছু ভাবছে না।

খাদ্য, বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের দেশ

দি গার্ডিয়ান, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭০

কলিম সিদ্দিকী

অনুবাদ: ফাহমিদুল হক

বঙ্গোপসাগরের দিকে ধাবমান নদী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র সৃষ্ট ব-দ্বীপে ছোট ছোট দ্বীপ ও অসংখ্য খালবিল নিয়ে কলকাতার পূর্ব দিকে দেশটি অবস্থিত। এই নদীমাতৃক দৃশ্যপটে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ তিনটি জিনিস নিয়ে বেঁচে থাকে — বন্যা, খাদ্য ও দুর্ভিক্ষ — তিনটিই সমানভাবে বিখ্যাত। দেশটির বেশিরভাগ অংশ সমতল ও নিচু যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১.৫ থেকে ২.০ ফুট উঁচু।

সমুদ্র সাধারণত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র থেকে জল গ্রহণ করে। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ সে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, বদ্বীপের উপরিতলটি ভাসিয়ে নেয়। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা হয় ২০ ফুটের মতো, কখনো কখনো এমনকি ৫০ ফুটের মতো। একেকটি জলোচ্ছ্বাস এসে, বিগত জলোচ্ছ্বাসের পর মানুষ যা বিনির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিল, তার সবকিছু ধ্বংস করে ফেলে।

প্রকাশিত

বদ্বীপ অংশটি পূর্ব পাকিস্তানের ৭০ মিলিয়ন লোকের শতকরা ৮০ ভাগ ধারণ করে যেটি হল বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল — প্রতি বর্গমাইলে এখানে ১২০০ লোক বাস করে। বঙ্গোপসাগরের দয়ায় মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিলিয়ন লোক এর করাল থাবায় সরাসরি আক্রান্ত হয়। কিন্তু এই জনগোষ্ঠী পৃথিবীর সবচাইতে দরিদ্রদের একটি যেখানে মাথাপিছু আয় মাত্র ২০০ রুপি। (পাকিস্তানের গড় মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ৪১৮ রুপি বা প্রায় ৩০ পাউন্ড যদি সেখানে তুলনামূলকভাবে ধনী পশ্চিম পাকিস্তানকে যোগ করা হয়।)

উদ্ধারকারীরা এবং সরকার সাধারণত এত দেরিতে উপদ্রুত অঞ্চলে পৌঁছে যে জনগণের জন্য তাদের আর তেমন কিছু করার থাকে না। তারা উপদ্রুত এলাকার সমস্যাগুলোকে সমাধান-অযোগ্য মনে করেন, পূর্বের অভিজ্ঞতা মনে করে কাঁধ ঝাঁকান এবং ঢাকা বা ইসলামাবাদে ফিরে যান। আরেকটা জলোচ্ছ্বাস না আসা পর্যন্ত তাদের আর দেখা পাওয়া যায় না। এরপর ফ্যাশন্যাবল একটি সংবাদ শোনা যায় — ‘সাইক্লোনের কারণে সব যোগাযোগ-ব্যবস্থা বিঘ্নিত।’ তারা বড়োজোর এরকম কিছু করতে পারেন যে, হেলিকপ্টার ও বিমানে করে তারা উড়তে থাকবেন, নিচের ধ্বংসলীলা দেখবেন এবং সম্ভবত যেখানে জনমানুষের অস্তিত্ব দেখতে পাবেন সেখানে খাদ্য ফেলবেন। সত্যি কথা হল, এ-অঞ্চলে আধুনিক কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থাই নেই যা বিঘ্নিত হতে পারে। সবচেয়ে ভালো অবস্থায় এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে পরের নৌকাটি পেতে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।

কর্তৃত্ব

ভূগোল অবশ্য এলাকাটির একমাত্র সমস্যা নয়। ইতিহাস জুড়ে বাংলা হল ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের সীমান্তভূমি। বাংলা সবসময় দূরবর্তী শাসনকর্তা দ্বারা শাসিত হয়েছে, এবং মজার ব্যাপার হল ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পরে শাসনকর্তারা ইতিহাসের সবচেয়ে দূরবর্তী শাসনকর্তায় পরিগণিত হন।

কিছু পরস্পরবিরোধিতা পরীক্ষা করা যাক। ব্রিটিশরা পাটশিল্প প্রবর্তন করেছিল, কিন্তু দেশবিভাগের কারণে সে মিলগুলো কলকাতায় থেকে গেল। পূর্ব পাকিস্তানে অনেক নতুন জুটমিল স্থাপন করা হয়, কিন্তু সরকার প্রবর্তিত কৃষিজ-পণ্যের মূল্য-নির্ধারণী-নীতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের উদ্যোক্তাদের হাতে চাষীদের শোষিত হবার প্রক্রিয়াটি বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত উন্নত নগর অঞ্চলের শিল্পায়ন উন্নয়নের কাজ হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের পাটনির্ভর অর্থনীতির উদ্বৃত্ত ব্যবহার করে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে সম্পদ স্থানান্তরের বার্ষিক পরিমাণ ২৫০ মিলিয়ন রুপি। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে, বিশেষত ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক স্বৈরাচার চালু হবার পর থেকে এ-অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান ক্ষতির পরিমাণ বিশাল।

এই সম্পদের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানে বন্যা-নিয়ন্ত্রণের খরচে কম বরাদ্দ হয়। কয়েক বছর থেকে এ-সমস্যা নিয়ে গবেষণারত বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে ২০টি বহুমুখী প্রকল্প এই সমস্যার বৃহত্তর সমাধান দিতে পারে যার আনুমানিক খরচ হবে ৮০০ মিলিয়ন ডলার।

অর্জন

বিদেশী গাড়ি (প্রধানত জাপানি এবং জার্মানি), রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডশনার, এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে পাকিস্তান যা খরচ করে, তার তুলনায় এই খরচ একটি নতুন পরিপ্রেক্ষিতের জন্ম দেয়। পাকিস্তান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রায় ২০% সুদে ব্যয় করে ৫ বিলিয়ন ডলারের অধিক বিদেশী ঋণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যেকোনোভাবেই কোনো দৃঢ়চেতা সরকার অভ্যন্তরীণ মুদ্রা-সম্পদের সমস্যায় পড়তে পারে না। এসব কারণে বিশ্বব্যাংক প্রস্তাবিত বাঁধ বা খাল নির্মাণকর্ম নাও করা যেতে পারে, যদিও কোনো বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই একটি বাঁধ-ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। এটা ইচ্ছার ব্যর্থতা, অর্থের নয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক প্রয়োজনীয় ৮০০ মিলিয়ন ডলার দেবে না; কারণ মৃত্যু ও ধ্বংসের এই মাত্রা একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সিন্ধুর পানি নিয়ে ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা নিয়ে বিশ্বব্যাংক এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো অবশ্য ‘শান্তিরক্ষায় এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ’ করেছিল।

তবে এখন কিছু নিদর্শন দেখা যাচ্ছে, যাতে বোঝা যাচ্ছে যে, বর্তমান সরকার সমস্যাগুলোকে একটু গুরুত্বসহকারে দেখছে। প্রত্যেক বক্তৃতায় জেনারেল ইয়াহিয়া খান বন্যা-নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি একমাত্র যে পদেক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন তা হলো: ‘আমার নির্দেশনা অনুযায়ী পরিকল্পনা কমিশন এই কর্মসূচীতে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য বন্ধুভাবাপন্ন সব দেশ থেকে সহায়তা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। আমি নিশ্চিত যে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি এই সমস্যা সমাধানের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে।’

আমন্ত্রণ

কিন্তু প্রেসিডেন্ট সমস্যার ভয়াবহতাকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে ভাবেননি। সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ সম্পদের ব্যবহার এবং অন্তঃত বিষয়টিকে কম ধ্বংসাত্মক হবার ব্যবস্থা করা সরকারের এজেন্ডার মধ্যে আসেনি। ইয়াহিয়া খান বলেন: ‘এই উপলক্ষে আমাদের বিশেষ একটি তহবিল গঠনের ইচ্ছা আছে, বন্ধুভাবাপন্ন দেশসমূহকে এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাসমূহকে সাহায্য প্রদান করার আহ্বান জানানো হবে এবং যাতে পাকিস্তান নিজেই যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ প্রদান করবে।’

বিশ্বসংস্থা ও দেশসমূহ ইয়াহিয়া খানের আবেদনে সাড়া দিবে কি না তা এখন দেখার বিষয়। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য তার চাইতে বড় আকাঙ্ক্ষার বিষয়, বেসামরিক ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া — এ-মুহূর্তে সমুদ্রের জলে ভেসে গেছে।

আলবদর বাহিনীর তালিকা

ঢাকা বিভাগ

টাঙ্গাইল জেলা:
অপরাধী: আনিস- আল-বদর

ময়মনসিংহ জেলা:
অপরাধী: আশরাফুজ্জামান- আলবদর বাহিনীর প্রধান
মোঃ নুরুল ইসলাম-আল-বদর প্রধান
আল-বদর কমান্ডার- ক্বারী আব্দুল কাদের
আল-বদর-মো: আবুল বাশার (বাসায়েত)
আল-বদর কমান্ডার – সুরুজ
আলবদর- জুলু
আল-বদর – জি. এম. এনামুল হক,
আল-বদর মাওলানা জুবাদেয়দ আলী
আল-বদর- কাজী মউদ্দিন
আল-বদর-মো: ফয়জুল বারী
আল-বদররের জেলা ডেপুটি কমান্ডার-মাকসুদ
আল-বদর-মাওলানা আব্দুস সামাদ
আল-বদর-মো: আব্দুস সামাদ
আল-বদর-আ: কুদ্দুস মহুরী
আল-বদর-মো: আশরাফ আলী
আল-বদর- মওলানা এরশাদ উল্লাহ
আল-বদর- মওলানা আবুল কাশেম বালিয়া
আল-বদর- মাওলানা দৌলত আলী
আল-বদর- মাওলানা গিয়াস উদ্দিন
আশরাফ হোসেন, ইসরামী ছাত্র সংঘ, ময়মনসিংহ
শামছুল হক, সভাপতি, ইসলামী ছাত্র সংঘ, ঢাকা

ফুলবাড়িয়া থানা

জি. এম. এনামুল হক-আল-বদর
মাওলানা জুবাদেয়দ আলী- আল-বদর
কাজী মউদ্দিন- আল-বদর
মো: ফয়জুল বারী- আল-বদর
মাকসুদ-আল-বদর জেলা ডেপুটি কমান্ডার
মাওলানা আব্দুস সামাদ-আল-বদর
মো: আব্দুস সামাদ-আল-বদর
বদর-আ: কুদ্দুস মহুরী-আল-বদর
মো: আশরাফ আলী-আল-বদর
শেরপুর জেলা
মোঃ কামরুজ্জামান আল বদর বাহিনীর ডেপুটি চিফ অব কমান্ড
জয়নাল -আল-বদর বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড
শাহজাহান চৌধুরী- আলবদর বাহিনীর রূপকারদের মধ্যে অন্যতম
আনোয়ার হোসাইন -আল বদর বাহিনীর অন্যতম রূপকার ও কর্নধার
কামরান, আল-বদর বাহিনী সৃষ্টির অন্যতম রূপকার

শেরপুর সদর
রাজাকার-জয়নাল – শেরপুর টাউন, শেরপুর
মোঃ কামরুজ্জামান, পিতা-ইনসান আলী, গ্রাম-কুমরি মুদিপাড়া, পোঃ + ইউনিয়ন- বাজিতখিলা, থানা+ জেলা- শেরপুর।
এ মান্নান, পিতা-মৃত মহিউদ্দীন মন্ডল, কাচারী পাড়া, জামালপুর,
হারুন উর রশিদ শেলি, পিতা-মৃত জসীমউদ্দিন, কাচারী পাড়া, জামালপুর,
আব্দুল বারী, পিতা-আব্দুর রহমান মঞ্জুরী, বগাবাইদ, জামালপুর,
সৈয়দ আশরাফ হোসেন, পিতা- মৃত সৈয়দ বিতাল মিয়া, মিয়াপাড়া, তবলপুর, জামালপুর,
প্রফেসর শরীফ আহমেদ, পিতা-মৃত জাফর আহমেদ, কাচারী পাড়া, জামালপুর,
মুক্তা, পিতা-মৃত জোবেদ আলী, কাচারী পাড়া, জামালপুর,
হাসেম, পিতা-মৃত আব্দুল লতিফ, কাচারী পাড়া, জামালপুর,
মোতাহার আলী, গ্রাম-ফুলকাচা, মেলানদহ, জামালপুর।
ফুলবাড়িয়া থানা
আলবদর-মাওলানা জুবাদেয়দ আলী, গ্রাম-জোরবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ
আলবদর-জি. এম. এনামুল হক, গ্রাম-জোরবাড়িয়া
আলবদর-রিয়াজ উদ্দিন, গ্রাম-ভালুকা, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
আলবদর-কাজী মউদ্দিন, গ্রাম-চৌদার, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
আলবদর-মো: ফয়জুল বারী, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
আলবদর-মাকসুদ, পিতা-মৃত মাহমুদ আলী, গ্রাম-বইলজান, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
আলবদর-আ: কুদ্দুস মহুরী, গ্রাম-দণিপাড়া, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ

গফরগাঁও থানা
আলবদর-মৃত মাওলানা রিয়াজ উদ্দিন, গ্রাম-অললী, থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ।

জামালপুর জেলা
আলবদর-মো: আশরাফ হোসাইন-আল-বদর বাহিনীর চীফ অফ কমান্ড বা আল-বদর প্রধান
আলবদর–আব্দুর সাত্তার (নূরুল) পিতা- ময়েজ মন্ডল, সাং-জঙ্গলপাড়া, থানা- জামালপুর সদর
আলবদর–আব্দুল কাদের, পিতা-মফিজউদ্দিন, সাং-জঙ্গল পাড়া, থানা-জামালপুর সদর

নেত্রকোনা জেলা
আলবদর-হেদায়েত উল্লাহ-আল-বদর প্রধান
আলবদর-হুমায়ুন কবীর, নেত্রকোনা
সামসুল হুদা-আল মোজাহিদ প্রধান

কিশোরগঞ্জ জেলা
আলবদর-মাওলানা আব্দুল হামিদ (সাবেক মাদ্রাসা সুপার)
আলবদর-মাওলানা আব্দুল খালেক
মওলানা আতাউর রহমান খান- ইসলামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক
আলবদর-আব্দুল হাসিম

সূত্র:
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা
ডা. এম এ হাসান
আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি
ট্রুথ কমিশন ফর জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ
ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মো: ০১৮১৭০০৭৯২১

গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের তালিকা

যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এবং প্রমাণ রয়েছে তারা হল-( কেন্দ্রীয় তালিকা)

জনাব সৈয়দ খাজা খায়েরুদ্দিন, জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব মাহমুদ আলী, জনাব আব্দুল জব্বার খদ্দর, মওলানা সিদ্দিক আহমদ, জনাব আবুল কাশেম, জনাব মোহন মিয়া, মওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম, জনাব আব্দুল মতিন, অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার, পীর মোহসেন উদ্দিন, জনাব এএসএম সোলায়মান, জনাব এ. কে রফিকুল হোসেন, জনাব নুরুজ্জামান, জনাব আতাউল হক খান, জনাব তোয়াহা বিন হাবিব, মেজর (অব:) আফসার উদ্দিন, দেওয়ান ওয়ারাসাত আলী, এবং হাকিম ইরতেজাউর রহমান খান।
আব্বাস আলী খান, জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর
মতিউর রহমান নিজামী, পিতা-খন্দকার লুৎফর রহমান, গ্রাম-মন্মথপুর, পো:বেড়া, সোনাতলা, থানা সাঁথিয়া, পাবনা
মো: কামরুজ্জামান, জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল
আব্দুল আলীম, যুদ্ধের সময় জয়পুরহাটের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল
মোহাম্মদ আয়েন উদ-দীন, পিতা-মৃত মো: মইনুদ্দিন, গ্রাম+পোস্ট-শ্যামপুর, থানা-মহিতারা, রাজশাহী
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, গ্রাম-সউতখালী, থানা-পিরোজপুর, পিরোজপুর জামাতে ইসলামীর মজলিসের শুরার সদস্য
মৃত মওলানা আবদুল মান্নান, চাঁদপুর
আনোয়ার জাহিদ, ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টি ও ভাসানী ন্যাপের অন্যতম নেতা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালাল ছিল
আবদুল কাদির মোল্লা, জামাতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক
এ এস এম সোলায়মান, পিতা-মো: জোনাব আলী, গ্রাম-বৈদ্যের বাজার, পো: বৈদ্যের বাজার, থানা-সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ
ফজলুল কাদের চৌধুরী-থানা-রাউজান, চট্টগ্রাম,
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, পিতা-মৃত ফজলুল কাদের চৌধুরী, থানা-রাউজান, চট্টগ্রাম
মওলানা আব্দুস সোবহান, পিতা-মৃত নঈমুদ্দিন, মহল্লা-পাথরতলা, পাবনা
মওলানা এ কে এম ইউসুফ, গ্রাম-রাজৈর, থানা-স্মরণখোলা, জেলা-বাগেরহাট
আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি এবং আলবদর বাহিনীর ঢাকা মহানগরীর প্রধান।
এ বি এম খালেক মজুমদার, পিতা-আবদুল মজিদ মজুমদার, গ্রাম-দোহাড্ডা, থানা-হাজিগঞ্জ, কুমিল্লা

বিভাগ ওয়ারী তালিকা
ঢাকা বিভাগ

ময়মনসিংহ

রিয়াজ উদ্দিন-জামায়াত নেতা , ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ

জামালপুর
মওলানা আব্দুল বারী, সাং-গোবিন্দপুর, থানা-সরিষাবাড়ি, জামালপুর, জামায়ত নেতা

শেরপুর
আনোয়ার হোসাইন অন্তু শেরপুর টাউন শেরপুর। ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা

নেত্রকোনা
মওলানা ফজলুল করিম, সাং-বিসিউড়া, থানা-নেত্রকোনা সদর, নেত্রকোনা। জামায়ত নেতা

নোয়াখালী জেলা:
ফজলে আজিম-জামায়াতে ইসলামীর নেতা
অধ্যাপক মহিউদ্দীন- জামায়াতে ইসলামীর নেতা

মাগুরা জেলা

রিজু-ইসলামী ছাত্রসংঘ
কবির -ইসলামী ছাত্রসংঘ

দালাল/কলাবরেটর: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আসামী: ড. মতিয়ুর রহমান,
ড. ওয়াসিম,
ড. শরীফ আহমেদ,
সিদ্দিক প্যাটেল

নীলফামারী জেলা
কাইয়ুম মুন্সী -জামাতে ইসলামীর নেতা
মওলানা আবদুল কাইয়ুম-জামাতে ইসলামীর নেতা
মতিন হাশমী -জামাতে ইসলামীর নেতা

অন্যান্য
মওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, (হাফেজ্জী হুজুর) সভাপতি, খেলাফত আন্দোলন, গ্রাম-সোহাগপুর, থানা-বেলকুচি, পাবনা
আখতার ফারুক, সম্পাদক, খেলাফত আন্দোলন, দৈনিক সংগ্রাম
মওলানা মুফতী দীন মোহম্মদ খান, সম্পাদক জামিয়া ফোরকানীয়া
মওলানা সিদ্দিক আহমদ, সভাপতি, জামেয়াতুল ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম
মওলানা মোস্তফা আল মাদানী, সহ- সভাপতি, জামেয়াতুল ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম
মওলানা আশরাফ আলী, সাধারণ সম্পাদক, জামেয়াতুল ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম
মওলানা ইসহাক, কর্মকর্তা নেজামে ইসলাম,
মওলনা মোহাম্মদ ইউসুফ, অধ্য কাসেমুল উলুম পটিয়া, চট্টগ্রাম
মওলানা আজিজুর রহমান, সম্পাদক, হিজবুল্লা, শর্সিনা, বরিশাল
আব্দুল কাদের মোল্লা, সদস্য ইসলামী ছাত্র সংঘ
নুরুল ইসলাম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্র সংঘ পূর্ব পাকিস্তান
সৈয়দ শাহ জামাল চৌধুরী, সভাপতি ইসলামী ছাত্রসংঘ, ঢাকা
অধ্যাপক ওসমান রনজ, আমীল, জামায়াতে ইসলামী, চট্টগ্রাম শাখা
শফিকুল্লা, সম্পাদক, শ্রম ও সমাজ কল্যাণ, জামায়াতে ইসলামী
মওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম, সহ-সভাপতি, জামায়াতে ইসলামী,
অধ্যাপক গোলাম আজম, আমীর জামায়াতে ইসলামী, গ্রাম-বীরগাঁও, থানা-নবীনগর, কুমিল্লা
মোস্তফা শওকত ইমরান, সাধারণ সম্পাদক, ইসলামী ছাত্র সংঘ, ঢাকা শহর,
আ. ম. রুহুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা জামায়াতে ইসলামী, গ্রাম-জায়গীরমহল, থানা-পাইকপাড়া, খুলনা,
মাহবুবুর রহমান গুরহা, সদস্য, জামায়াতে ইসলামী
এনামুল হক মঞ্জু, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, চট্টগ্রাম কলেজ শাখা
আবু নাসের, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, চট্টগ্রাম জেলা
আজহারুল ইসলাম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, রাজশাহী জেলা
সরদার আব্দুস সালাম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, ঢাকা জেলা
মীর আবুল কাসেম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ পূর্ব পাকিস্তান
আব্দুল বারী, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, জামালপুর জেলা
মতিউর রহমান খান, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রসংঘ, খুলনা জেলা
মোহাম্মদ ইউসুফ, সেক্রেটারি জেনারেল ইসলামী ছাত্রসংঘ
মাহমুদ আলী, সহ-সভাপতি, পাকিস্তান ডেমোক্রোটিক পার্টি, সুনামগঞ্জ
ফরিদ আহমেদ, সহ-সভাপতি, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি
মওলানা আব্দুল জব্বার. সহ-সভাপতি পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রাম-গনক, থানা-সোনাগাজী, ফেনী
নূরুল আমিন, সহ-সভাপতি পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রাম-বাহাদুরপুর, থানা নান্দাইল, ময়মনসিংহ
আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ, পীর শর্সিনা, গ্রাম-শর্সিনা, বরিশাল
ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, উপাচার্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জোহরা মঞ্জিল, নাজিম উদ্দিন রোড, ঢাকা
ড. আব্দুল বারী, উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মশিয়ূর রহমান ( যাদু মিয়া) রংপুর,
ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ড. হাসান জাহান, অধ্যাপক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ড. মোহর আলী, রীডার, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হাফেজ মকবুল আহমেদ, চট্টগ্রাম
চৌধুরী মঈন উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আশরাফুজ্জামান খান- চট্টগ্রাম
ড. হাবিবুল্লা, অধ্যাপক, শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউস, ঢাকা
মওলানা নূর আহমেদ, সম্পাদক, দাওতুল হক
মওলানা আব্দুল মান্নান, সভাপতি, মোদাচ্ছারিন, গ্রাম-কেরোয়া, থানা-ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর
এটিএম মতিন, গ্রাম-আশ্বিনপুর, থানা-মতলব, কুমিল্লা

ঢাকা বিভাগ
ময়মনসিংহ
মো: আব্দুল হান্নান, গ্রাম-নতুন বাজার, ময়মনসিংহ- মুসলিম লীগ নেতা ছিল, বর্তমানে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন।
আমান উল্লাহ চৌধুরী, গ্রাম-ধামচইর, থানা-ভালুকা, ময়মনসিংহ-মুসলীম লীগ নেতা ছিল।
মৃত আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, (চাঁন মিয়া) থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ। মুসলীম লীগের প্রভাবশালী নেতা ।
মৃত মফিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি- থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ (মুসলীমলীগ)
আব্দুল জলিল মিয়া-মুসলিম লীগ নেতা, সাবেক এমপি, থানা হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ (মুসলীম লীগ)
আব্দুল জলিল মিয়া-মুসলিম লীগ, ফুলপুর

রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহী জেলা:
আয়েন উদ্দীন- মুসলিম লীগের সদস্য

লালমনিরহাট জেলা:
মহসিন ডাক্তার মুসলিম লীগার
শহীদ আলী- মুসলিম লীগার
মোশারফ মাস্টার- মুসলিম লীগার
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রাম জেলা:
ফজলুল কাদের চৌধুরী-মুসলিম লীগার
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী-মুসলীম লীগার
ওহিদুল আলম মুসলীম লীগার
আলী আহম্মদ টিকে মুসলীম লীগার

নোয়াখালী জেলা:
অপরাধী: মুনীর-শান্তি কমিটির সেক্রেটারি
ফজলে আজিম-জামায়াতে ইসলামীর নেতা
অধ্যাপক মহিউদ্দীন- জামায়াতে ইসলামীর নেতা

অন্যান্য
ফজলুল কাদের চৌধুরী, সভাপতি, মুসলিম লীগ, গুড সাহেবের পাহাড়, চট্টগ্রাম,
এ এনএম ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক মুসলিম লীগ, গ্রাম-দাদপাড়া, থানা-কুলাউড়া, সিলেট
শামছুল হুদা, সভাপতি, মুসলিম লীগ- ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, কার্যকরী সদস্য, গুডস হিল, রহমতগঞ্জ, চট্টগ্রাম
কে. জি. করিম, সাধারণ সম্পাদক, মুসলিম ছাত্র লীগ
আতাউল হক খান, সাধারণ যুগ্ম সম্পাদক, প্রাদেশিক মুসলিম লীগ
এ কে এম মুজিবুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক, মুসলিম লীগ
সাদ আহমেদ, সভাপতি কুষ্টিয়া জেলা, মুসলিম লীগ
আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক, মুসলিম লীগ, উলিপুর, কুড়িগ্রাম
এডভোকেট মজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য, মুসলিম লীগ (কাইয়ুম), কুমিল্লা
আব্দুল আলীম, কর্মকর্তা মুসলিম লীগ, গ্রাম, থানা+ জয়পুরহাট
নূরুল আনোয়ার, কর্মকর্তা, মুসলিম লীগ, চট্টগ্রাম,
ইউসুফ আলী, চৌধুরী, সদস্য, মুসলিম লীগ

সূত্র:
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা
ডা. এম এ হাসান
আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি
ট্রুথ কমিশন ফর জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ
ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মো: ০১৮১৭০০৭৯২১

শান্তি কমিটির সদস্য

১৫ এপ্রিল ১৯৭১ ঢাকার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ যাবত শান্তি কমিটি নামে পরিচিত শান্তি কমিটির নাম পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি রাখা হয়েছে বলে ১৫ এপ্রিল ১৯৭১ এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়। (সূত্র: ১৬ এপ্রিল ১৯৭১, সংগ্রাম) এর ২১ সদস্যের একটি কার্যকরী কমিটিতে যারা ছিল তারা হল- জনাব সৈয়দ খাজা খায়েরুদ্দিন, জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব মাহমুদ আলী, জনাব আব্দুল জব্বার খদ্দর, মওলানা সিদ্দিক আহমদ, জনাব আবুল কাশেম, জনাব মোহন মিয়া, মওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মাসুম, জনাব আব্দুল মতিন, অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার, ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দিন, পীর মোহসেন উদ্দিন, জনাব এএসএম সোলায়মান, জনাব এ. কে রফিকুল হোসেন, জনাব নুরুজ্জামান, জনাব আতাউল হক খান, জনাব তোরাহা বিন হাবিব, মেজর (অবসর প্রাপ্ত) আফসার উদ্দিন, দেওয়ান ওয়ারাসাত আলী, এবং হাকিম ইরতেজাউর রহমান খান।

শান্তি কমিটির সাবকমিটি:

শান্তি কমিটি গঠন করার জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব মাহমুদ আলী, আবদুল জব্বার খদ্দর ও আবুল কাসেমকে নিয়োগ করা হয়।

কমিটি জনাব হাবিবুল হকের পরিবর্তে জনাব মাহবুবুজ্জামানকে লালবাগ এলাকার একজন সংযোগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়। তাছাড়া কমিটি ৩৭৫, উত্তর শাহজাহানপুরের জনাব ফজলুল হক, ১৫১, দণি কমলাপুরের শাহ মইজুদ্দিন ও ২২৫ মালীবাগের জনাব আব্দুল হাইকে রমনা থানার এবং ২৩ সেন্ট্রাল রোডের জনাব মসিহল ইসলাম ও জনাব আব্দুল খালেককে লালবাগ থানার সংযোগ অফিসার নিয়োগ করে।

কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যকরী কমিটির দৈনন্দিন কার্য নির্বাহের জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়।

জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব এ জে. খদ্দর, জনাব এ এস এম সোলায়মান, জনাব আব্দুল মতিন ও এস এস কে খয়েরুদ্দিন।

শান্তি কমিটির সমর্থক ও থিঙ্ক ট্যাংক

বিচারপতি জনাব এ কে এম বাকের, মওলানা সাইয়েদ মুস্তফা মাহমুদ আল মাদানী, মওলানা মুহম্মদ আবদুর রহীম, পীর মোহসেন উদ্দীন, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, ড. হাসান জামান, ড: কাজী দীন মুহাম্মদ, ড. মফিজুল্লাহ কবীর, ড. মোহর আলী, ড. হাবিবুল্লাহ, অধ্য জালালুদ্দিন, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ব্যারিষ্টার আখতার উদ্দীন, ব্যারিষ্টার কোরবান আলী, অধ্যাপক আবদুল গফুর, মওলানা ওবায়দুল্লাহ, মওলানা মোস্তাসির আহমদ রহমানী, অধ্য এ আর ফাতমী, অধ্য ইব্রাহিম খান, এডভোকেট এ. টি. সাদী, মেজর আফসার উদ্দীন, মওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ মাসুদ এবং ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম।

ঢাকা বিভাগ

ঢাকা জেলা

শেখ ঈমান আলী-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান- রায়েরবাজার, ঢাকা
এবিএম খালেক মজুমদার -শান্তি কমিটির সদস্য- ঢাকা শহর
আশরাফুজ্জামান -শান্তি কমিটির সদস্য- ঢাকা
শফিউদ্দিন আহমেদ-শান্তি কমিটির আহ্বায়ক- নবাবগঞ্জ, ঢাকা
নূরুল ইসলাম চৌধুরী-পিডিপি নেতা- নবাবগঞ্জ, ঢাকা
সিরাজ মাস্টার-শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক- নবাবগঞ্জ, ঢাকা
আলবদর হেদায়েত উল্লাহ-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান- নবাবগঞ্জ, ঢাকা
মাওলানা আহমদ উল্লহ-শান্তি কমিটির সদস্য- নবাবগঞ্জ, ঢাকা
আতাউদ্দীন, শান্তি কমিটির সদস্য- নবাবগঞ্জ, ঢাকা
ইসলাম খান- শান্তি কমিটির সদস্য- নবাবগঞ্জ, ঢাকা
হেদায়েত উল্লাহ-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান- রায়েরবাজার, ঢাকা

ময়মনসিংহ জেলা

ময়মনসিংহ সদর
এডভোকেট শামছুদ্দিন আহমদ, গ্রাম-বাঘমারা, সদস্য-জেলা শান্তি কমিটি।

গফরগাঁও থানা
মৃত গিয়াস উদ্দিন মাস্টার, শান্তি কমিটির সদস্য-গ্রাম-বেলদিয়া, থানা-গফরগাঁও
মো: ফজলুর রহমান সুলতান, শান্তি কমিটির সদস্য-থানা-গফরগাঁও, জেলা- ময়মনসিংহ
মৃত মফিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি- থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ
মৃত মাওলানা আব্দুল বাতেন, শান্তি কমিটির সদস্য-থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ

নান্দাইল থানা
কাজী তমাদক আলী -শান্তি কমিটির সভাপতি- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
এ এফ এম ইসহাক -শান্তি কমিটির সহ-সভাপতি- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
আব্দুল গনি ভুঁইয়া -শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
ডা. আবদুল খালেক -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
আরিফ উদ্দিন আকন্দ -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
ইব্রাহিম মাস্টার (ভাটিসাভার) -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
মোবারক আলী -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
মোয়াজ্জেম হোসেন সরকার -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
ইয়াজদর সরকার -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
আলী আকবর ভুঁইয়া -শান্তি কমিটির সদস্য– নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
মমতাজউদ্দিন ভুঁইয়া -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
নিলুর বাপ -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
আব্দুল্লাহ খান -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
হাসান আলী ফকির -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
মোসলেমউদ্দিন -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
আব্দুল হামিদ কোম্পানি -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
কুতুবউদ্দিন খান -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ
মহব্বত আলী -শান্তি কমিটির সদস্য- নান্দাইল থানা, ময়মনসিংহ

হালুয়াঘাট থানা
হযরত আলী-শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মো: শামছুল ইসলাম (শামসু খলিফা)-শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
তাজী মামুদ -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খাঁ-শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মোঃ আব্দুল কাশেম সিকদার-শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মোঃ আঃ জলিল- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
হযরত আলী চেয়ারম্যান -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মোঃ আজিজুল ইসলাম -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মোঃ হরমুজ আলী -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
ডা. কুবাদ্দুজ্জামন -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
আব্দুল মান্নান মিয়া (দুদু মিয়া) -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মাঃ রুহুল আমিন (চেয়ারম্যান) -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মাওলানা জাফর আহম্মদ-শান্তি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
বাহার উদ্দিন মেম্বার (মৃত), সাং-কয়রাহাটি, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
কুবাদ্দুজ্জামান মেম্বার (মৃত), সাং-তেগুরিয়া, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
হাজী এবাদ আলী (মৃত), সাং-মাঝিয়ালী, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
ইউসুফ উদ্দিন সরকার (মৃত), সাং মাঝিয়ালী, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
কছিম উদ্দিন মেম্বার (মৃত), সাং-আছরল পাড়া, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
সৈয়দ গোলাম মর্তূজা (তুলা চেয়ারম্যান), -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
গ্রাম্য ডা. কুবাদ্দুজ্জামন, সাং-বীরগুছিনা, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মনাহাজী মৃত, সাং-দরিনসুয়া, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
মীর হোসেন, পিতা-মৃত কেলিশেখ, সাং-মাঝিয়ালী, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট
মৃত হোসেন আলী মাতব্বর (চেয়ারম্যান), -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
হযরত আলী চেয়ারম্যান, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
রিয়াজউদ্দিন মৃত, সাং-মনিকুড়া, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
আঃ মনি, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
রমজান আলী, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
আকরাম হোসেন, -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ
আঃ বারেক মৃত, সাং-ইসলামপুর -শান্তি কমিটির সদস্য -থানা-হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ

মুক্তাগাছা থানা
মৃত কেরামত আলী তালুকদার, সভাপতি, থানা শান্তি কমিটিও সাবেক এমপি, থানা-মুক্তাগাছা
মৃত আব্বাস আলী, তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান ও পৌর শান্তিকমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা
মৃত ফয়জুর রহমান চেয়ারম্যান দাওগাও ইউনিয়নের শান্তিকমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা
মৃত আব্দুর রাজ্জাক চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
মৃত ডালিম চেয়ারম্যান (ডালিম মৌলভী) শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
মৃত খন্দকার নুরুল ইসলাম (তোতা মৌলভী) শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
সুরুজ্জামান চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
শামছুল হক চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
মৃত আব্দুল হামিদ মৌলভী চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
মৃত আব্দুর রাজ্জাক চেয়ারম্যান ঘোগা ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সভাপতি ছিল।
শেখ আব্দুল হাকিম চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ

ফুলপুর থানা
চেয়ারম্যান জোবেদ ফকির- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ
আমির খান- শান্তি কমিটির সদস্য ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ
রজব আলী ফকির- শান্তি কমিটির সদস্য, ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ
আবু বকর সিদ্দিক, শান্তি কমিটির সদস্য- ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ
মরহুম মাওলানা ফয়জুর রহমান, সভাপতি- জেলা শান্তি কমিটি, থানা-ফুলপুর, জেলা- ময়মনসিংহ।
আবুল জলিল খান (মৃত), ফুলপুর সম্পাদক শান্তি কমিটি, থানা-ফুলপুর, জেলা- ময়মনসিংহ।
ময়ছয়উদ্দিন তালুকদার (মৃত) পুটিয়া সম্পাদক শান্তি কমিটি, থানা-ফুলপুর, জেলা- ময়মনসিংহ।

ভালুকা থানা
মৃত মোজাম্মেল হক মেম্বার- শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক, থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ
আঃ গণি মেম্বার- শান্তি কমিটির সদস্য- থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ
আব্দুল ওয়াহাব খান, শান্তি কমিটির সদস্য-থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ
মৌলভী তোরাব আলী, শান্তি কমিটি অন্যতম সদস্য- থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ
আফাক উদ্দিন বেপারী (চেয়ারম্যান) শান্তি কমিটির সভাপতি-থানা ভালুকা।
মো: নাসির উদ্দিন (চেয়ারম্যান), – শান্তি কমিটির সভাপতি- থানা-ভালুকা, জেলা-ময়মনসিংহ

ফুলবাড়িয়া থানা
মো: আব্দুস সামাদ মাস্টার (টিক্কা খান)-শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
ডা. আবুল হোসেন-শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
মৃত ডা. গোলামুর রহমান, শান্তি কমিটির সদস্য, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া
মৃত মৌলভী আব্দুল কুদ্দুস, শান্তি কমিটির সদস্য, গ্রাম-ফুলবাড়িয়া, থানা-ফুলবাড়িয়া
মো: আ: সালাম মাস্টার, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ
চৌদার, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
মৃত শাহাবউদ্দিন, গ্রাম-বাশদী, শান্তি কমিটির সভাপতি, থানা-ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ
মৃত মোকসেদ আলী সরকার, শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
মৃত সফর আলী সরকার (সফর চেয়ারম্যান), শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া
মৃত আজিজুল হক (হক সাব) শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ।
সাবেদ আলী আকন্দ চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ
মৃত ইয়াকুব আলী চেয়ারম্যান শান্তি কমিটির সদস্য, থানা-ফুলবাড়িয়া, জেলা-ময়মনসিংহ

শেরপুর জেলা
মোঃ ইয়াদ আলী খান-শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক, থানা+ জেলা- শেরপুর
এডভোকেট হাবিবুর রহমান (মৃত), শান্তি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, শেরপুর টাউন, শেরপুর
গোলাম হক চেয়ারম্যান মৃত, শান্তি কমিটির সভাপতি, সাং- আন্ধারিয়া, থানা+ জেলা- শেরপুর,
মোঃ ইয়াদ আলী খান, শান্তি কমিটির, সাং- সূর্য্যদী, থানা+ জেলা- শেরপুর

জামালপুর জেলা
মৃত মক্তব কবিরাজ, সাং-মেডিকেল রোড, সভাপতি, শান্তি কমিটি, জামালপুর শহর, জামালপুর।
ডা. মোঃ আব্দুস সামাদ খান, সাধারণ সম্পাদক শান্তি কমিটি, সাং-বকুলতলা, জামালপুর
মোবারক হোসেন ইসলামপুর থানার শান্তি কমিটির আহবায়ক ছিল

নেত্রকোনা জেলা
শেখ নজমুল হোসেন-শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক
আবুল হোসেন চেয়ারম্যান-শান্তি কমিটির সদস্য
ইব্রাহিম চেয়ারম্যান- শান্তি কমিটির সদস্য
বদরুল-শান্তি কমিটির সদস্য
মাহতাবউদ্দিন-শান্তি কমিটির সদস্য
ছোয়াব উদ্দিন চেয়ারম্যান- শান্তি কমিটির সদস্য
মৃত এ কে ফজলুল হক, সাং-দেওপুর, নেত্রকোনা শহর, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
আব্দুল হেকিম চেয়ারম্যান, সাং-বামুনগাঁও, থানা-বারহাট্টা। শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা
ইব্রাহিম চেয়ারম্যান, থানা-পূর্বধলা। সে শান্তি কমিটির অন্যতম
মৃত খোকা, সাং-ছিলামপুর, থানা-কেন্দুয়া- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
আঞ্জু, সাং-ঘগড়া, থানা-কেন্দুয়া। বদরুল, সাং কান্দিউড়া, থানা-কেন্দুয়া। শান্তি কমিটির সদস্য
মৃত আবুল হোসেন শেখ, থানা-মোহনগঞ্জ। শান্তি কমিটির নেতা
মাহতাবউদ্দিন, সাং-বড়কাশিয়া, থানা-মোহনগঞ্জ। মোহনগঞ্জ থানা শান্তি কমিটির
মৃত দেওয়ান মসনিয়া চৌধুরী। সাং-ফতেপুর থানা-মদন। সে মদন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান

কিশোরগঞ্জ জেলা
লোকমান মৌলভী-শান্তি কমিটির সভাপতি, কিশোরগঞ্জ সদর,
মওলানা আতাউর রহমান খান- ইসলামী পাটির সাধারণ সম্পাদক, কিশোরগঞ্জ সদর,
আব্দুর রহমান সরকার-শান্তি কমিটির সভাপতি, কিশোরগঞ্জ সদর
মওলানা মুসলেহউদ্দিন, শান্তি কমিটির সভাপতি, কিশোরগঞ্জ সদর
আব্দুল আওয়াল খান শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক, যশোদল, কিশোরগঞ্জ সদর,
মেনু চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা, গ্রাম-চিকনীরচর, কিশোরগঞ্জ সদর,
মাহতাব উদ্দিন চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটি সভাপতি, গ্রাম-কলাপাড়া, কিশোরগঞ্জ সদর,
আব্দুর রহমান সরকার, শান্তি কমিটির সভাপতি, গ্রাম-যশোদল, কিশোরগঞ্জ সদর

গাজীপুর জেলা:
অপরাধী: মজিদ সরকার-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান

ফরিদপুর জেলা:
অপরাধী: ডা: কাজী ইমদাদুল হক -শান্তি কমিটির সদস্য
আজিরুদ্দীন খান -শান্তি কমিটির সদস্য
আনিস কাজী -শান্তি কমিটির সদস্য
আদিল উদ্দীন হাওলাদার -শান্তি কমিটির সদস্য

মাদারীপুর জেলা
হামিদ খোনকার -শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
আব্দুর রহমান হাওলাদার -শান্তি কমিটির সভাপতি
মহিউদ্দীন -শান্তি কমিটির সহ-সভাপতি
আব্দুল হামিদ খন্দকার -শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক
মওলানা খলিলুর রহমান -শান্তি কমিটির সদস্য

গোপালগঞ্জ
আ: বর মোল্লা- শান্তি কমিটির সদস্য

টাঙ্গাইল জেলা
মওলানা লুৎফর -শান্তি কমিটির সদস্য
মওলানা আশরাফ আলী-শান্তি কমিটির সদস্য
মাওলানা ওয়াদুদ -শান্তি কমিটির সদস্য

রাজশাহী বিভাগ

রাজশাহী জেলা
আয়েন উদ্দীন- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
মোসলেম উদ্দিন-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান

পাবনা জেলা
রহিম বকস-শান্তি কমিটির সদস্য
খোদা বক্স খান -শান্তি কমিটির সদস্য
মওলানা নাসির উদ্দিন -শান্তি কমিটির সদস্য
ইসমাইল হোসেন -শান্তি কমিটির সদস্য
আব্দুস সামাদ মহলদার -শান্তি কমিটির সদস্য

গাইবান্ধা জেলা
আজিজুর রহমান খন্দকার-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান

নীলফামারী জেলা
কাইয়ুম মুন্সী-শান্তি কমিটির সদস্য

ঠাকুরগাঁও জেলা
মোঃ গোলাম রসুল -শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক

খুলনা বিভাগ

মাগুড়া জেলা
রিজু-শান্তি কমিটির সদস্য
কবির -শান্তি কমিটির সদস্য
ঝিনাইদহ জেলা
তোবারক -শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
হাবিবুর রহমান জোয়ার্দ্দার -শান্তি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান
মজনু -শান্তি কমিটির সেক্রেটারি
হোসেন মোল্লা -শান্তি কমিটির সদস্য

বরিশাল বিভাগ

পটুয়াখালী জেলা
আলাউদ্দিন সিকদার- শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান
মোতাহার খন্দকার- শান্তি কমিটির সদস্য

পিরোজপুর জেলা
সাত্তার মিয়া-শান্তি কমিটির সেক্রেটারি

সিলেট বিভাগ

মৌলভীবাজার জেলা
বিএবিটি আব্দুল বারী -শান্তি কমিটির সদস্য আহ্বায়ক

চট্টগ্রাম বিভাগ

নোয়াখালী জেলা
মুনীর-শান্তি কমিটির সেক্রেটারি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
মোঘল মিয়া-শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান

সূত্র:
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা
ডা. এম এ হাসান
আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি
ট্রুথ কমিশন ফর জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ
ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মো: ০১৮১৭০০৭৯২১

বিহারি যুদ্ধপরাধীদের নামের তালিকা

ঢাকা বিভাগ

ঢাকা জেলা
বিহারি সাইদুর রহমান- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আহমেদ- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি জানু- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি চুয়া- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি মহররম – পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি ভকসা মাছওয়ালা- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি বদরু-মিরপুর, ঢাকা
বিহারি রফিক- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি সালাউদ্দিন- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি বেনারসী- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি মাহমুদ আলী- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি হিরু-পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি রাব্বী- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি জিলানী- পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আক্তার গুন্ডা- মিরপুর, ঢাকা।
বিহারি নাদির গুন্ডা- মিরপুর, ঢাকা।
বিহারি আজিজ- মিরপুর, ঢাকা।
বিহারি ওয়ালী খান- মিরপুর, ঢাকা।
বিহারি মোহাররম-মিরপুর, ঢাকা
বিহারি শাহজাদা-মিরপুর, ঢাকা
বিহারি কাইয়ুম গুন্ডা- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আফতাব হোসেন-জল্লাদখানা, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আব্বাস-সেনপাড়া পর্বতা, শিয়ালবাড়ি, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আমজেদ মেম্বার-সেনপাড়া পর্বতা, শিয়ালবাড়ি, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি দিলা খান- জল্লাদখানা, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি মেহের আলী খান- জল্লাদখানা, মিরপুর, ঢাকা
বিহারি মজিদ বোম্বার- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি কালু- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি গনি- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি মুজাহিদ- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি কিয়াম- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি সাইদুল- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি জলিল- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি শাহজাদা– মিরপুর, ঢাকা
বিহারি মাজহার- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি জাবেদ- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি হানিফ- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আনসারী-মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আকবর- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি ইকবাল- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি মাস্তানা- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি কাম্মা- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি হাক্কু- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি ছেদি– মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আশরাফ– মিরপুর, ঢাকা
বিহারি আলী আহাম্মদ- মিরপুর, ঢাকা
বিহারি মঞ্জু মাস্তানা- মিরপুর, ঢাকা

রাজবাড়ি জেলা

বিহারি আব্দুর রব মাস্টার
বিহারি সৈয়দ কামার
বিহারি হাসান উল্লাহ
বিহারি জাহান উল্লাহ
বিহারি আলাউদ্দিন

ময়মনসিংহ

বিহারী নূর মোহাম্মদ, গ্রাম-আমুয়াকান্দা, পোস্ট-ফুলপুর, থানা ময়মনসিংহ
বিহারি আনোয়ার- ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ
বিহারি ঈদ মাসুদ – ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ
বিহারি আঃ জব্বার ফুলপুর বাসস্টান্ড- ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ
জামালপুর
বিহারী আতাব, সাং-ফুলবাড়িয়া রেল গেইটপাড়া, জামালপুর শহর, জামালপুর।

নেত্রকোনা
বিহারী মদিনা, থানা-মোহনগঞ্জ।

রাজশাহী বিভাগ

রাজশাহী জেলা
তৈয়ব আলী (অবাঙালি স্টেনো)
বিহারি মুজাফ্ফর
বিহারি দ্বীন মোহাম্মদ

নাটোর জেলা
সাদেক বিহারি
বিহারি দালাল মাসাদ্দি
বিহারি হাফেজ আব্দুর রহমান-নাটোর

গাইবান্ধা জেলা
স্থানীয় বিহারি- গোলাম

নীলফামারী জেলা
নিসার আহমেদ বিহারি।
বিহারি সালারু গুন্ডা
বিহারি ইদ্রিস ডাকাত
বিহারি মহিউদ্দিন গুন্ডা

লালমনিরহাট
বিহারি মহাজন

ঠাকুরগাঁও জেলা
বিহারী মোহাম্মদ আলী

খুলনা বিভাগ

যশোর জেলা

বিহারি ভুট্টা- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশোর
বিহারি কানা রশীদ- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশোর
বিহারি মোস্তাফা- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশোর
বিহারি ওয়াসিয়া- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশোর
বিহারি আবুল- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশোর
সিলেট বিভাগ

মৌলভীবাজার জেলা
বিহারি সর্দার খান

চট্টগ্রাম বিভাগ

চট্টগ্রাম জেলা
বিহারি নেতা আইয়ুব খান

সূত্র:
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের তালিকা
ডা. এম এ হাসান
আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি
ট্রুথ কমিশন ফর জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ
ফোন: ৮৯১৪৫০৬, ফ্যাক্স: ৮৯১৩৮১৯, মো: ০১৮১৭০০৭৯২১

বীরাঙ্গনা রাসমনি দেবীর জীবনযুদ্ধ – বিজয় কর রতন

মিটামইনের সরকারহাটির সেই ১৯৭১ সালের বীরাঙ্গনা রাসমনি দেবীর (৫০) খবর কেউ রাখে না। সহায়-সম্বলহীন রাসমনি দেবী অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অনেক বীরাঙ্গনার খবর পত্রপত্রিকায় এসেছে। কিন্তু বিদায়ী জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার বাড়ির পাশের বীরাঙ্গনা রাসমনি দেবীর খবর হয়তো তিনি নিজেও রাখেন না। বক্তৃতা-বিবৃতিতে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন। কিন্তু এদের কথা কেউ বলেন না। এ যেন আলোর নিচে অন্ধকার। সম্প্রতি কথা হয় রাসমনি দেবীর সঙ্গে। ১৯৭১ সালের শ্রাবণ মাসে মিটামইন সরকারহাটির মৃত রামলোচন চত্রক্রবর্তীর মেয়ে রাসমনি দেবীর বয়স যখন ১৬ বছর, তখন একই উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের ঢালারগাঁও ছত্রিশে এক টগবগে যুবকের সঙ্গে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তার বিয়ে হয়। তার বিয়ের পরপরই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর তান্ডবলীলা এবং ঘটতে থাকে একের পর এক বর্বরোচিত ঘটনা। তখন বর্ষাকাল। চারদিকে অথৈ পানি। ওই সময়ই তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর মেয়ে-জামাই ফিরাগমন করে জামাইয়ের নিজ বাড়ি ছত্রিসে চলে আসেন রাসমনি দেবীকে নিয়ে। চলে আসার দু’দিন পরই হঠাত দুপুরবেলায় পাক হানাদার বাহিনী ঢালারগাঁও ও ছত্রিসের প্রায় ৩ শ’ মানুষকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে আরো ২০ মহিলাকেও তারা নিয়ে যায় ইটনা পাকবাহিনী ক্যাম্পে। প্রথমে যাদের ধরা হয় তাদের গুলি করে হত্যা করে। মিটামইন উপজেলায় আতপাশা ভয়রা গাছের নিচে তাদের গণকবর দেয়। আর মহিলাদের গণধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়। সুন্দরী রাসমনি দেবী অর্থাত যিনি বীরাঙ্গনা খেতাব পান তাকে গণধর্ষণ করে নদীতে ফেলে দেয়। ইটনা থানার ছিলনী গ্রামের জেলেরা রাসমনিকে নদী থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে যায়। তখন তিনি অজ্ঞান ছিলেন। জেলেরা তাকে আগুনের তাপ দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে নিয়ে আসে। জ্ঞান ফেরার পর নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে তিনি মিটামইন সরকারহাটির কথা বলেন। জেলেরা তাকে মিটামইনে পৌঁছে দেয়। তার স্বামীকে পাক হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। এরপর থেকেই রাসমনি মিটামইনে তার পিত্রালয়ে বসবাস করতে থাকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবল্পব্দু শেখ মুজিবুর রহমান রাসমনিকে এক হাজার টাকা প্রদান করেন এবং তাকে একটি সার্টিফিকেটও দেন। সেই থেকেই রাসমনি দেবী বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচিত এবং দুর্বিষহ জীবনের গ্লানি বয়ে বেঁচে আছেন। বঙ্গবন্ধুর ওই কাজের পর স্বাধীনতার ৩৬টি বছর কেটে গেল; কিন্তু কোনো সরকারই রাসমনি দেবীর খবর নেয়নি। এমনকি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন ডেপুটি স্পীকার ও পরের সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদও তার খোঁজ নেননি। বর্তমানে তিনি খুব কষ্টে তার ভাই দেবরাজ চক্রবর্তীর আশ্রয়ে আছেন। দেবরাজ পান-সুপারির ব্যবসা করে কোনোরকমে দিনযাপন করেন। এ বছর স্থানীয় ইউএনও অফিসের পিয়ন নরেশ দাস ইউএনও সাহেবকে বলে রাসমনি দেবীর জন্য বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। এ টাকা দিয়ে রাসমনি চলতে পারেন না। মিটামইনে এই রাসমনি দেবীর মতো অনেকেই আছেন যাদের অবস্থাও প্রায় একই রকম। রাসমনি দেবীরা আমাদের গৌরব। তাদের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন নিজেদের দৈন্যকেই প্রকট করে তোলে। রাসমনি দেবী মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলেই ফিরে যান সেই দিনগুলোতে। ডুকরে কেঁদে ফেলে বিলাপ করেন, ‘আমি আবার যুদ্ধ দেখতে যাই।’

উতস: সমকাল: ইন্টারনেট এডিশন জানুয়ারী ৭, ২০০৮